আইপিএস (Instant Power Supply) হলো লোড শেডিং এর সময় বিদ্যুত সরবরাহের মাধ্যম, যা বাসাবাড়ি, অফিস, দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই লেখাটি থেকে জানতে পারবেন
- আইপিএস কোথায় ব্যবহার করা উচিত
- কোথায় অনুচিত
- সঠিক রেটিংয়ের আইপিএস মেশিন ও ব্যাটারি নির্বাচন
- মার্কেটে এভাইলাবল স্ট্যান্ডার্ড সাইজ ও ব্র্যান্ড
- একটি ভাল মানের আইপিএস মেশিনের বৈশিষ্ট
আইপিএস এর ব্যবহারঃ
- ১। লোড শেডিং এর সময় বিকল্প হিসেবে বাসাবাড়ি, অফিস,দোকান ও সকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
- ২। শব্দহীন পরিবেশ বজায় রেখে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ
- ৩। সেনসিটিভ বৈদ্যুতিক সামগ্রী পরিচালনা যেমনঃ কম্পিউটার, স্বাস্থ্য সরঞ্জাম, নেটওয়ার্ক টাওয়ার।
আইপিএস ব্যবহার করা উচিত নয় যখনঃ
- ১। অধিক পরিমানে হেভি বিদ্যুতিক লোড থাকলে (হিটার, এসি, ফ্রিজ, মোটর ইত্যাদি)।
- ২। অনেক বড় সেটাপ যেমন একটি সুপার মার্কেট এর কেন্দ্রীয় ইমার্জেন্সি বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা হিসেবে।
সঠিক আইপিএস নির্বাচনঃ
আইপিএস মেশিন ও ব্যাটারি নির্বাচনের পূর্বে লোডশেডিং এর সময় কি কি যন্ত্রপাতি চলমান থাকা প্রয়োজন তা জানতে হবে।
আইপিএস এর দুইটি প্রধান উপাদানঃ আইপিএস মেশিন ও ব্যাটারি।
মেশিনের একক VA, ব্যাটারির একক Ampere।
মেশিনের ক্যাপাসিটি ১০০০ VA হলে এর Watt ক্যাপাসিটি হচ্ছে ১০০০ * ০.৮ = ৮০০ Watt
ব্যাটারির ক্যাপাসিটি ২০০ Ampere হলে এর Watt ক্যাপাসিটি হচ্ছে ২০০ * ১২ = ২৪০০ Watt
সঠিক ক্যাপাসিটির আইপিএস মেশিন নির্বাচনঃ
একটি উদাহরণের মাদ্ধমে পুরো বিষয়টা উপস্থাপন করি।
ধরা যাক, একটি বাসা বাড়িতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর নিচের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম গুলো চালু রাখা দরকারঃ
১। ৩ টি বৈদ্যুতিক পাখা,
২। ৩ টি এনার্জি লাইট,
৩। একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার
প্রতিটি ফ্যান ১০০ ওয়াট * ৩ টি = ৩০০ ওয়াট
প্রতিটি লাইট ৩০ ওয়াট * ৩ টি = ৯০ ওয়াট
একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার ২৫০ ওয়াট * ১ টি = ২৫০ ওয়াট
তাহলে মোট Watt হলোঃ ৩০০ + ৯০ + ২৫০ = ৬৪০ ওয়াট
এখন উপরের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম গুলো আইপিএস দিয়ে চালাতে আইপিএস এর ক্যাপাসিটি ৬৪০ Watt ÷ ০.৮ = ৮০০ VA এর সমান বা বেশি হলেই হবে। আমাদের আইপিএস মেশিন নির্বাচন সম্পন্ন হলেও ব্যাটারি সাইজ নির্বাচন এখনো বাকি।
ব্যাটারি সাইজ ও ব্যাকাপ টাইমঃ
ব্যাটারি সাইজের সাথে আইপিএস এর ব্যাকাপ টাইপ সম্পর্কিত। উপরের উদাহরণে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর মোট ৬৪০ Watt বৈদ্যুতিক লোড সচল রাখতে হবে। ৬৪০ Watt লোড সচল রাখার জন্য যদি ২০০ Ampere এর একটি ব্যাটারি আইপিএস মেশিনের সাথে ব্যবহার করি তাহলে ব্যাকাপ টাইম হবেঃ
২০০ Ampere * ১২ Volt = ২৪০০ Watt
২৪০০ Watt ÷ ৬৪০ Watt = ৩.৭৫ ঘন্টা
আবার ৬৪০ Watt লোড সচল রাখার জন্য যদি ১৬০ Ampere এর একটি ব্যাটারি ব্যবহার করি তাহলে ব্যাকাপ টাইম হবেঃ
১৬০ Ampere * ১২ Volt = ১৯২০ Watt
১৯২০ Watt ÷ ৬৪০ Watt = ৩ ঘন্টা
আবার লোড কমালে একই ব্যাটারি দিয়ে আরো দীর্ঘ সময় ব্যাকাপ পাওয়া যাবে। যেমন ৬৪০ Watt বৈদ্যুতিক লোড এর ক্ষেত্রে কম্পিউটারটি বন্ধ থাকলে বৈদ্যুতিক লোড কমে গিয়ে (৬৪০ Watt – ২৫০ Watt) ৩৯০ Watt hobe, সেক্ষেত্রে ২০০ Ampere এর একই ব্যাটারি দিয়ে ব্যাকাপ টাইম হবেঃ
২০০ Ampere * ১২ Volt = ২৪০০ Watt
২৪০০ Watt ÷ ৩৯০ Watt = ৬.১৫ ঘন্টা
স্ট্যান্ডার্ড সাইজঃ (আইপিএস মেশিন ও ব্যাটারি)
মার্কেটে বর্তমান স্ট্যান্ডার্ড আইপিএস মেশিনের সাইজঃ
- ২৫০ VA
- ৪০০ VA
- ৬০০ VA
- ৮০০ VA,
- ১০০০ VA
- ১৫০০ VA
- ২০০০ VA ইত্যাদি
মার্কেটে বর্তমান স্ট্যান্ডার্ড আইপিএস এর ব্যাটারির সাইজঃ
- ৮০ Ampere
- ১০০ Ampere
- ১৩০ Ampere
- ১৬০ Ampere
- ২০০ Ampere ইত্যাদি
আইপিএস মেশিনের ক্ষেত্রে PSW ও MSW কি?
PSW ও MSW – এগুলো হলো আইপিএস মেশিনের বৈদ্যুৎ আউটপুটের বৈশিষ্ট।
PSW মানে হলো Pure Sine Wave। PSW আউটপুট এর মেশিন গুলো সেনসিটিভ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম যেমন কম্পিউটার, এলসিডি টিভি, স্বাস্থ্য সরঞ্জাম ইত্যাদি চালনার জন্য উপযুক্ত। এই মেশিনগুলো একটু দাম বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত লোকাল মার্কেটে যে সব আইপিএস তৈরি ও বাজারজাত করা হয় সেই সব আইপিএস এ এই সুবিধাটি যুক্ত থাকে না।
MSW মানে হলো Modified Square Wave। বাসাবাড়ি বা যে কোন প্রতিষ্ঠানে সাধারণ বৈদ্যুতিক লোড পরিচালনায় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয় কারণ একই ক্ষমতার আইপিএস মেশিনের ক্ষেত্রে এই মেশিনগুলো দাম অপেক্ষাকৃত কিছুটা কম হয়।
একটি আইপিএস মেশিনে কি কি ফীচার থাকে?
একটি আইপিএস মেশিনে সাধারণ ফিচার গুলো হলঃ
- ১। শর্ট সার্কিট প্রটেকশন,
- ২। ওভারলোড প্রটেকশন,
- ৩। ওভার চার্জ ও ওভার ডিসচার্জ প্রটেকশন,
- ৪। অটোমেটিক ভোল্টেজ রেগুলেটর
- ৫। অডিও, ভিজুয়্যাল অ্যালার্ম
- ৬। কুইক চার্জিং টেকনোলজি
- ৭। লো ট্রান্সফার টাইম
এই ফিচারগুলো একটি আইপিএস মেশিনে অবশ্যই থাকা উচিত। এছাড়াও আরো কিছু সুবিধা অ্যাডভান্স আইপিএসগুলোতে দেখা যায়
- ৮। বিভিন্ন ধরনের ব্যাটারি চার্জিং ক্যাপাবিলিটি
- ৯। আইপিএস – ইউপিএস মোড
- ১০। সোলার প্যানেল ব্যবহার যোগ্যতা
কোম্পানিভেদে ও ইকোনমি ফ্রেন্ডলী করার জন্য সব ফিচার একই আইপিএস মেশিনে বিদ্যমান নাও থাকতে পারে।
আইপিএস এর জন্য কি কি ধরনের ব্যাটারির পাওয়া যায়?
- ১। লিড এসিড ব্যাটারি (সর্বাধিক ব্যবহৃত, সাশ্রয়ী)
- ২। এসএমএফ ব্যাটারি
- ৩। টিউবুলার ব্যাটারি (দীর্ঘস্থায়ী ও অধিক মান সম্পন্ন)
মার্কেটে বহুল ব্যবহৃত আইপিএস মেশিন ব্র্যান্ড সমূহঃ
- ১। রহিমা আফরোজ
- ২। হ্যামকো
- ৩। গার্ডিয়ান
- ৪। পাওয়ার হাউজ
- ৫। গার্ডিয়ান
- ৬। Su-Kam
মার্কেটে বহুল ব্যবহৃত আইপিএস এর ব্যাটারি ব্র্যান্ড সমূহঃ
- ১। হ্যামক
- ২। রিমসো
- ৩। নাভানা
আশা করি, এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা একটি গোছানো দিকনির্দেশনা দিতে পেরেছি। এছাড়াও আইপিএস সম্পর্কিত যে কোন তথ্য জানতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন এখানে।